Dedollarisation : ভারতীয় টাকাই কী এবার দুনিয়াকে করবে বাজিমাৎ ? 11%পতনের পরিনাম – সমগ্র বিশ্ব সত্যিই কী প্রত্যাহার করছে US Dollar ?

///
467 views
19 mins read
7
Dedollarisation
Dedollarisation

Dedollarisation: সারা বিশ্বে পরিবর্তন আসছে

আমেরিকার অর্থনীতি সবচেয়ে শক্তিশালী হওয়ার কারণেই সমগ্র বিশ্ব জুড়ে বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক ও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়ে নাক গলাতে সুবিধা হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের । আর সেই সুবাদেই আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সর্বক্ষেত্রে আমেরিকা অতিরিক্ত সুবিধা পেয়ে থাকে।  এর অন্যতম কারণ হলো আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সর্বস্তরেই লেনদেনের অন্যতম সর্বগ্রাহ্য় মাধ্যম হলো  মার্কিন ডলার। 

যদি ভারতীয় মুদ্রা অর্থাৎ ইন্ডিয়ান রুপির মেটেরিয়াল ভ্যালুর  কথা ধরা হয় ,তবে ২০০, ৫০০ , ২০০০ টাকার নোট শুধুই একটা কাগজের টুকরো। কিন্তু এই কাগজের টুকরোর উপর আমরা গোটা দেশবাসী ভরসা রাখি কারণ এই কাগজের উপর ভারত সরকারের একটা স্ট্যাম্প আছে বলে। সেভাবেই সারা বিশ্ব মার্কিন ডলারের উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যাম্প টির  উপরেই এতদিন ভরসা রেখে এসেছে। তাই ডলার ভাঙানো টাও  অনেক বেশি সহজ বিশ্বের সবজায়গাতেই। ডলারেই চলে সমস্ত দেশের বৈদেশিক আমদানি রপ্তানি। এটাই আমেরিকার অর্থনীতিকে জোরদার করে তুলছে। এখানেই আমেরিকার আসল শক্তি।  

সেই জায়গাটাই এবার বদলাতে শুরু করে দিয়েছে।  গুরুত্ব কমছে ডলারের(Dedollarisation)। ডলারের বদলে বিশ্বের নানা দেশ ভারতীয় মুদ্রার বা ভারতীয় টাকার  উপরেই ভরসা রাখতে শুরু করেছে। আন্তর্জাতিক লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে তারা সর্বাধিকার দিচ্ছে ভারতীয় টাকা কেই। 

জেনে রাখা প্রয়োজন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে মার্কিন ডলার ছাড়া অন্য কোনো দেশের মুদ্রায় লেনদেন করতে হলে Vostro  Account খুলতে হয়। একটি বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক যখন অন্য একটি বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক এর হয়ে লেনদেন করার জন্য একাউন্ট খোলে তখন সেই একাউন্ট কেই Vostro  Account বলে। 

রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এর কাছে ভারতীয় মুদ্রায় লেনদেনের Vostro  Account খোলার জন্য ১৮ টি দেশ থেকে অনুরোধ এসেছে। এই অনুরোধকারী দেশের নামের তালিকায় ব্রিটেন ,সিঙ্গাপুরের মতো উন্নত দেশগুলির নামও রয়েছে তালিকাভুক্ত। 

কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রী পীযূষ গোয়াল জানিয়েছেন ,রিসার্ভ ব্যাঙ্ক এরকম ৬০ টি একাউন্ট খোলার ছাড়পত্র দিয়েছে ইতিমধ্যেই। এই কারণে বিভিন্ন দেশের সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের সাথে আলাপ আলোচনাও চলছে ভারতীয় রিসার্ভ ব্যাঙ্কের। 

ইতিমধ্যেই আমরা ভারতীয়রা রাশিয়া থেকে তেল কিনছি সরাসরি ভাবে ভারতীয় মুদ্রার মাধ্যমেই। এছাড়াও অন্যান্য অনেক দেশের সাথেও লেনদেন শুরু হয়েছে সরাসরি ভারতীয় মুদ্রার মাধ্যমেই ,যা এবার বৃহত্তর আকার নিতে চলেছে সমগ্র বিশ্বের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের বাজারে। 

আমরা সবাই জানি , মার্কিন ডলারের মূল্যের সাথে তুল্য মূল্য বিচারের নিরিখেই বিশ্বের অন্যান্য দেশের নিজস্ব মুদ্রার মূল্য নির্ধারিত হয়। কিন্তু মার্কিন মুলুকের অর্থনীতিতে এখন ভাঁটার টান। মার্কিন মুলুকে একের পর এক ব্যাঙ্ক দেউলিয়া হয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে সবাই এখন Dedollarisation এর দিকে আরো বেশি করে ঝুঁকতে চাইছে।

Dedollarisation কী ?

Dedollarisation  বলতে বোঝায় যে  কোনো দেশের আন্তর্জাতিক বানিজ্যে লেনদেন করার সময় তাদের রিজার্ভ কারেন্সি, বিনিময়ের মাধ্যম বা অ্যাকাউন্টের একক হিসাবে মার্কিন ডলারের উপর নির্ভরতা হ্রাস করা ।

Dollar এর ইতিহাস –

মার্কিন ডলার ১৯২০ সাল থেকে পাউন্ড স্টার্লিংকে আন্তর্জাতিক রিজার্ভ কারেন্সি হিসাবে স্থানচ্যুত করতে শুরু করেছিল , মূলত  এটি প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এর সময় থেকে একটি নির্ভরযোগ্য আন্তর্জাতিক লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে সারা বিশ্বে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। এবং যেহেতু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধকালীন স্বর্ণের প্রবাহের একটি উল্লেখযোগ্য প্রাপক ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আরও শক্তিশালী পরাশক্তি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করার পর, ১৯৪৪ সালের ব্রেটন উডস চুক্তি যুদ্ধ-পরবর্তী আন্তর্জাতিক মুদ্রা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে, যেখানে মার্কিন ডলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য বিশ্বের প্রাথমিক রিজার্ভ মুদ্রা হয়ে ওঠে। 

ব্রেটন উডস সিস্টেম প্রতিষ্ঠার পর, মার্কিন ডলার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের একমাত্র মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হতে শুরু করে । ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অফ ট্রেজারি সুইফট আর্থিক স্থানান্তর নেটওয়ার্কের উপর যথেষ্ট তদারকি করে, এর ফলে বৈশ্বিক আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থায় বিদেশী মুদ্রার  উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার নিয়ম শুরু হয় ।

Dedollarisation এর প্রভাব :-

তথ্যানুসারে কয়েক বছর আগে বিশ্বের সব দেশের সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক গুলোর ফরেন কারেন্সী রিসার্ভ এর ৭১ শতাংশই ছিল মার্কিন ডলার।  সেই শতকরা পরিমান কমে এখন ৬০ শতাংশে নেমে এসেছে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ইউরো এবং চীনের ইউয়ান জমিয়ে রাখার প্রবণতা বাড়ছে। ঠিক এই পরিস্থিতিতেই আরো আরও বেশি করে আন্তর্জাতিক বাজারে ডি-ডলারাইজেশন ভূ-রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং আর্থিক বিবেচনার দ্বারা চালিত বৈশ্বিক মুদ্রা ব্যবস্থায় একটি দৃষ্টান্ত পরিবর্তনের প্রতিনিধিত্ব করে।

যদিও প্রক্রিয়াটি জটিল , তবে এটি দেশগুলির জন্য বৃহত্তর আর্থিক স্বায়ত্তশাসন জাহির করার, বাহ্যিক ধাক্কাগুলির ঝুঁকি কমাতে এবং আরও বহুমুখী বৈশ্বিক আর্থিক শৃঙ্খলার প্রচার করার সুযোগ দেয়। ডি-ডলারাইজেশন গতি লাভ করার সাথে সাথে, নীতিনির্ধারক এবং স্টেকহোল্ডারদের অবশ্যই উত্তরণটি সাবধানে নেভিগেট করতে হবে, আরও বহুমুখী এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক আন্তর্জাতিক আর্থিক ল্যান্ডস্কেপের দিকে একটি মসৃণ এবং টেকসই বিবর্তন নিশ্চিত করতে হবে।

Dedollarisation এর ফলাফল এবং চ্যালেঞ্জ:


১. অর্থনৈতিক প্রভাব: ডি-ডলারাইজেশন ( Dedollarisation) লেনদেনের খরচ বৃদ্ধি, বিনিময় হারের অস্থিরতা, এবং USD-নির্ভর বাণিজ্যের উপর অত্যন্ত নির্ভরশীল দেশগুলির জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে অ্যাক্সেস হ্রাস করতে পারে। যাইহোক, এটি দীর্ঘমেয়াদে বৃহত্তর অর্থনৈতিক স্থিতিস্থাপকতা, স্থিতিশীলতা এবং স্বাধীনতার প্রচার করতে পারে।

২. আর্থিক ব্যবস্থা অভিযোজন: USD থেকে দূরে স্থানান্তরের জন্য আর্থিক অবকাঠামো এবং নিয়ন্ত্রক কাঠামোতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন প্রয়োজন। যে দেশগুলো ডি-ডলারাইজ( Dedollarisation) করতে চায় তাদের অবশ্যই শক্তিশালী দেশীয় আর্থিক বাজার গড়ে তুলতে হবে, মূলধন অ্যাকাউন্ট ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে হবে এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বাড়াতে হবে।

৩. গ্লোবাল মনিটারি সিস্টেমের স্থিতিশীলতা: ডি-ডলারাইজেশন( Dedollarisation) মার্কিন ডলারের আধিপত্যে বিদ্যমান বৈশ্বিক মুদ্রা ব্যবস্থার জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। যেহেতু দেশগুলি তাদের রিজার্ভ হোল্ডিংকে বৈচিত্র্যময় করে এবং বিকল্প মুদ্রার প্রচার করে, আন্তর্জাতিক অর্থে ক্ষমতার ভারসাম্য পরিবর্তন হতে পারে, সম্ভাব্যভাবে বিশ্ব অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করে।

চাহিদা বাড়ছে ভারতীয় টাকার। 

ব্রিটেন, সিঙ্গাপুর ছাড়াও রাশিয়া ,জার্মানি ,ইসরায়েল ,নিউজিল্যান্ড , মালয়েশিয়ার মতো দেশও রয়েছে সেই তালিকায়।  আবার মায়ানমার ,কেনিয়া ,ওমাং ,উগান্ডা ,মরিশাস, ফিজি ,গয়নার মতো দেশ যাদের ভাণ্ডারে ডলার কম এবং যারা পশ্চিমি নিষেধাজ্ঞার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে ডলার ব্যবহার করতে পারে না ,তাদের কাছে ভারতীয় মুদ্রাই এ(রুপি ) আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে লেনদেনের সেরা মাধ্যম হিসেবে উঠে আসছে।

New LIC scheme : LIC এনেছে সেরা সুযোগ ! বিনিয়োগ করলেই কেল্লাফতে। বিশদে জানতে এখনই ক্লিক করুন।

7 Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Previous Story

IRCTC new guidelines and luggage rules:স্লিপার এবং AC কোচে লাগেজ রাখার নতুন 7 টি নিয়ম এখনই জানুন

Next Story

Sitaram Jindal Scholarship: সুবর্ণ সুযোগ ! আবেদন করলেই পাবে 50000 টাকা 

Latest from Blog

Latest Blogs

  • 14 mins read

    Weight loss in 7days : দূর্গা পূজা স্পেশাল সাধ্যের মধ্যে ব্যালান্সড ডায়েট চার্ট বাঙালির সেরা উৎসব মানেই দুর্গাপুজো।

  • 33 mins read

    Becoming a successful Agency : গড়ে তুলুন আপনার স্বপ্নের এজেন্সী। আজকের দ্রুত-গতির ব্যবসায়িক বিশ্বে, বিভিন্ন শিল্পে ক্লায়েন্টদের বিশেষ

  • 58 mins read

    Affiliate Marketing : ঘরে বসেই রোজগার করুন লাখ লাখ টাকা। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং (Affiliate Marketing) হল একটি পারফরম্যান্স-ভিত্তিক বিপণন

About us

Shironam Barta is an informative website for all. We provide all type of news and contents including trending topics, current news etc. through our website. We have no connection with any kind of governmental or non- governmental organization.

Our main purpose is to share information for fair use.

If you have any queries please contact us:

By Email : shironambarta@outlook.com

Copyright 2023. All Rights Reserved.